মোবাইল সিমের মতো হ্যান্ডসেটও আসছে নিবন্ধনের আওতায়: গ্রাহকদের করণীয় কী?

  • সানজানা চৌধুরী
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
বাংলাদেশের প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।

ছবির উৎস, Anadolu Agency

ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশের প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি হ্যান্ডসেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি।

বাংলাদেশে বছরে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট নানা অসাধু উপায়ে সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে দেশের বাজারে চলে আসছে।

এতে প্রতিবছর ৮শ থেকে এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

তাই অবৈধভাবে আমদানি ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট চিহ্নিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে যতোগুলো রেডিও ডিভাইস অর্থাৎ মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহৃত হবে সেই সেটগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায় সংস্থাটি।

এতে গ্রাহকদের সিমের মতো হ্যান্ড-সেটটিও নিবন্ধিত থাকবে।

আরও পড়তে পারেন:

গ্রাহকদের সিমের মতো হ্যান্ড-সেটটিও নিবন্ধিত থাকবে।

ছবির উৎস, MUNIR UZ ZAMAN

ছবির ক্যাপশান, গ্রাহকদের সিমের মতো হ্যান্ড-সেটটিও নিবন্ধিত থাকবে।

বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বিবিসি বাংলাকে জানান এতে অবৈধভাবে আমদানি, চুরি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ করা যাবে, গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে, মোবাইল ফোনের হিসাব রাখা যাবে। সবশেষে সরকারি রাজস্বের ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে।

তিনি জানান মূলত তিনটি ধাপে এই প্রক্রিয়াটি শুরু করা হবে।

প্রথম ধাপ: বৈধ ফোন চিনে রাখুন

প্রথমত, বাংলাদেশে যতোগুলো হ্যান্ডসেট বৈধভাবে আমদানি হচ্ছে এবং স্থানীয়ভাবে যে মোবাইলগুলো অ্যাসেমব্লিং করা হচ্ছে বা উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর ১৫ ডিজিটের স্বতন্ত্র আইএমইআই নম্বর নিয়ে একটি বৈধ ফোনের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।

এতে মানুষ যখন মোবাইল ফোন কিনতে যাবেন তখন তারা সেই সেটটির আইএমইআই নম্বর দিয়ে জানতে পারবেন যে তাদের সেটটি বৈধ নাকি অবৈধ।

ইআইআর এর মাধ্যমে শের প্রতিটি সক্রিয় সেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।

ছবির উৎস, Peter Macdiarmid

ছবির ক্যাপশান, ইআইআর এর মাধ্যমে শের প্রতিটি সক্রিয় সেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।

দ্বিতীয় ধাপ: হ্যান্ডসেট কিভাবে নিবন্ধন করবেন

দ্বিতীয় ধাপে বিটিআরসি তাদের ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (ইআইআর) খসড়া নির্দেশনা- ইআইআর তৈরি করবে।

যার আওতায় দেশের প্রতিটি সক্রিয় সেটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।

এরিমধ্যে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির ইআইআর যাচাই করে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য ২৪ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিটিআরসি।

প্রতিবেদনটি যাচাইয়ের জন্য মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।

সেখানে যদি কোন সংশোধনের প্রয়োজন তাহলে সেটা সম্পন্ন করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রতিবেদনটি বিটিআরসির কমিশনে পাঠানো হবে।

ফোনের আইএমইআই নম্বর যাচাই করে দেখুন আপনার সেটটি বৈধ কিনা।

ছবির উৎস, MANPREET ROMANA

ছবির ক্যাপশান, ফোনের আইএমইআই নম্বর যাচাই করে দেখুন আপনার সেটটি বৈধ কিনা।

খসড়া নির্দেশনাটিকে চূড়ান্ত হলে প্রত্যেক অপারেটরকে তাদের নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা প্রতিটি সক্রিয় হ্যান্ড-সেটের ডাটাবেজ তৈরির সময় বেঁধে দেয়া হবে।

এখানে গ্রাহকদের হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য কোথাও যেতে হবেনা।

তারা নিজেদের নিবন্ধিত সিমটি সেটে সক্রিয় করলেই সেটটি ওই নামে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন হয়ে যাবে।

ওই সেটে যদি দ্বিতীয় সিম ব্যবহার করতে হয় তাহলে সেটাও অবশ্যই একই নামে নিবন্ধিত সিম হতে হবে।

এছাড়া কারও যদি একাধিক সেট থাকে তাহলে তিনি দ্বিতীয় সেটটিতে যে নামের সিমটি সক্রিয় করবেন, সেই নামেই সেটটি নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

তখন ওই সেটে অন্য নামের কোন সিম চলবেনা। অর্থাৎ একটি সেট একজনের নামেই নিবন্ধিত হবে।

এভাবে একেকটি অপারেটরের আলাদা ডাটাবেজ সম্পন্ন হবে।

জেনে নিন আপনার ফোন কোন ক্যাটাগরির।

ছবির উৎস, NURPHOTO

ছবির ক্যাপশান, জেনে নিন আপনার ফোন কোন ক্যাটাগরির।

আপনার হ্যান্ডসেটটি কোন ক্যাটাগরির?

এরপর এই ডাটাবেজকে ব্ল্যাক, হোয়াইট ও গ্রে- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে।

খসড়া নির্দেশনায় 'হোয়াইট' বলতে বোঝানো হয়েছে বৈধভাবে আমদানি করা এবং দেশে বৈধভাবে তৈরি হ্যান্ডসেটগুলোকে। অর্থাৎ যে সেটগুলো বিটিআরসি নিবন্ধিত।

'গ্রে' ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ক্লোন, অনুমোদনহীন নকল, অবৈধভাবে আমদানি হয়ে আসা সেটগুলোকে।

এই সেটগুলো অবৈধ হলেও এবারের মতো সেগুলোকে অনুমোদন দেয়া হবে।

যারা ইতোমধ্যে এগুলো ব্যবহার করছেন বা দেশের বাইরে থেকে আনিয়েছেন তাদেরকে একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে যেন তারমধ্যেই তারা নিবন্ধিত সিম দিয়ে সেটটিকে সক্রিয় করে নেন।

চুরি যাওয়া হ্যান্ডসেটগুলোকে 'ব্ল্যাক' ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, চুরি যাওয়া হ্যান্ডসেটগুলোকে 'ব্ল্যাক' ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অন্যদিকে চুরি যাওয়া হ্যান্ড-সেটের আইএমইআই, মেয়াদ উত্তীর্ণ আইএমইআই যুক্ত সেট, নকল আইএমইআই সম্পন্ন হ্যান্ডসেটগুলোকে 'ব্ল্যাক' ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

যখন পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি হয়ে যাবে তখন সম্পন্ন করা হবে সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপের কার্যাদি।

তৃতীয় ধাপ: কমন সার্ভার

তৃতীয় ধাপে সরকার একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করবে যারা বিটিআরসির জন্য এই কেন্দ্রীয় প্লাটফর্ম বা কমন সার্ভার তৈরি করবে।

যেখানে প্রত্যেকটি অপারেটরের ডাটাবেজগুলো সিঙ্ক্রোনাইজ হবে।

অর্থাৎ বাংলাদেশে সক্রিয় প্রতিটি হ্যান্ডসেট কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে।

তখন এর নাম হবে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার- এনইআইআর।

এতে ইআইআর এ নতুন কোন ডেটা সংযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা এনইআইআরে চলে আসবে।

নিজের হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে গেলে সেটটিকে পুন:নিবন্ধন করতে হবে।

ছবির উৎস, Majority World

ছবির ক্যাপশান, নিজের হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে গেলে সেটটিকে পুন:নিবন্ধন করতে হবে।

সেট বিক্রি করতে গেলে বা হারিয়ে গেলে কী করবেন?

কেউ যদি তার নিবন্ধিত সেট অন্য কাউকে দিতে চান বা বিক্রি করতে চান তাহলে সেটটিকে পুন:নিবন্ধন করতে হবে।

সেক্ষেত্রে নিজের নাম অনিবন্ধিত করে যার কাছে সেট দেবেন তার নামে হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধিত করতে হবে।

সেটা কিভাবে করা হবে সেটা কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেবে।

তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল ফোন অপারেটরদের এই দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

এছাড়া যদি আপনার ফোন হারিয়ে যায় বা চুরি যায় সেক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানটি আমার পরিচয় শনাক্ত করে ফোনটি লক করে দেবে। যেন আপনার ফোনটি কেউ কোথাও ব্যবহার করতে না পারে।

কর্পোরেট সিম ও সেটের ক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা ভিন্ন।

ছবির উৎস, VCG

ছবির ক্যাপশান, কর্পোরেট সিম ও সেটের ক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা ভিন্ন।

ব্যতিক্রম:

তবে কর্পোরেট সিম ও সেটের ক্ষেত্রে নিয়মটা কিছুটা ভিন্ন। যেমন আপনার অফিস যদি আপনাকে একটি সিম ও হ্যান্ডসেট দেয়।

সেক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে ওই সেটটি আগে নিজের নামে নিবন্ধন করে নিতে হবে। তারপর তাতে কোম্পানির সিম ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়া সরকার চাইলে তাদের বিশেষ নির্দেশনায় বিশিষ্ট তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের হ্যান্ডসেট ব্যবস্থাপনার বাইরে রাখতে পারবে।

মূলত পুরো প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হওয়ার পর বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানান নাসিম পারভেজ।