হিন্দু মন্দিরে হামলার জেরে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা

  • শুভজ্যোতি ঘোষ
  • বিবিসি বাংলা, দিল্লি
চাঁদনি চক এলাকায় চলছে পুলিশি টহল

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, চাঁদনি চক এলাকায় চলছে পুলিশি টহল

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি হিন্দু মন্দিরে দু'দিন আগে এক ছোটখাটো হামলার পর এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হলে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার দিল্লি পুলিশের কমিশনারকে তলব করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লির পুলিশ প্রধানও জানিয়েছেন, হামলাকারীদের কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদেরও খোঁজ চলছে।

এদিকে হাউজ কাজি নামে যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে হিন্দু ও মুসলিম সমাজের নেতারা ঘন ঘন শান্তি বৈঠক ও পদযাত্রা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পুরনো দিল্লির অতি ঘিঞ্জি এলাকা হাউজ কাজিতে রবিবার বেশি রাতে দুই হিন্দু ও মুসলিম প্রতিবেশীর মধ্যে বাড়ির সামনে মোটরবাইক পার্ক করাকে কেন্দ্র করে তুচ্ছ বচসা হয়েছিল।

তার জেরেই ঘন্টাকয়েক পর স্থানীয় দুর্গা মন্দিরে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

এই মন্দিরেই হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, এই মন্দিরেই হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ

স্থানীয় এমএলএ অলকা লাম্বা বুধবার বিবিসিকে বলেন, "এই এলাকাটা গঙ্গা-যমুনা তেহজিব বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক পীঠস্থান।"

"অথচ এখানেই পার্কিং নিয়ে সামান্য ঝগড়ার জেরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ছড়িয়ে পড়ল যে এলাকায় না কি মব লিঞ্চিং চলছে।"

"হ্যাঁ, দুর্গা মন্দিরে পাথর ছোঁড়াতে কিছু কাচ ভেঙেছে বা মন্দিরের ক্ষতি হয়েছে এ কথা ঠিকই - কিন্তু মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বা আগুন লাগানো হয়েছে বলে যে সব রটনা চলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা।"

এদিকে দুর্গামন্দিরে হামলার এলাকায় গত তিনদিন ধরেই চলছে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা।

চাঁদনি চকের বিজেপি এমপি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন এলাকা পরিদর্শন করে শান্তি বজায় রাখার আবেদনও জানিয়েছেন।

ঘটনার পর থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে চাঁদনি চক এলাকা

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ঘটনার পর থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে চাঁদনি চক এলাকা

আরো পড়তে পারেন:

তিনি বলেন, "এই ঘটনা যতই যন্ত্রণাদায়ক ও হৃদয়বিদারক হোক তারপরও মহল্লায় সৌহার্দ্য রক্ষা করতেই হবে।"

"পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধেও কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।"

পুরনো দিল্লির ফতেহপুরী শাহী মসজিদের প্রভাবশালী ইমাম মুফতি মুকাররম আহমেদ আবার জানাচ্ছেন, "প্রায় তিন দশক আগে লালকৃষ্ণ আদভানির রথযাত্রাও কিন্তু এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল।"

"তখনও কিন্তু আমাদের মসজিদের ওপর ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়েছিল, ইমামসাহেবকে আঘাত করা হয়েছিল ত্রিশূল দিয়ে।"

ফতেহপুরী শাহী মসজিদের ইমাম মুফতি মোকাররম আহমেদ

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ফতেহপুরী শাহী মসজিদের ইমাম মুফতি মোকাররম আহমেদ

"তবে আমরা ওই ঘটনায় তেমন কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে আপোস করেছিলাম - কোনও মামলা হয়নি, কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি।"

এবারেও মুসলিমরা প্রয়োজনে মন্দিরের পুনর্নিমাণে সাহায্য করবে বলে জানিয়ে এই মুফতি বিষয়টা আপোসে মিটিয়ে নেওয়ারই আবেদন জানাচ্ছেন।

ড: সুরেখা নাঈমের মতো এই স্থানীয় বাসিন্দারাও একবাক্যে জানাচ্ছেন, এলাকার সম্প্রীতির পরিবেশ যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে।

"চাঁদনি চকের হিন্দু-মুসলিমরা যেভাবে একে অন্যের উৎসবে ও আনন্দে চিরকাল ভাগীদার হয়ে এসেছেন, সেই সংস্কৃতি তারা কিছুতেই নষ্ট হতে দেবেন না", বলছিলেন তিনি।

চাঁদনি চক এলাকার আম আদমি পার্টি বিধায়ক অলকা লাম্বা

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, চাঁদনি চক এলাকার আম আদমি পার্টি বিধায়ক অলকা লাম্বা

পাশ থেকে সুধীর ত্রিপাঠীও যোগ করেন, "খুব সম্ভবত বাইরের লোকরা এসেই এই ধরনের অসামাজিক কাজ করে গেছে।"

"কিন্তু আমাদের দুই সম্প্রদায়ের মুরুব্বিরাই একমত, তার জন্য নিজেদের মধ্যেকার এতদিনকার ভালবাসার সম্পর্ক নষ্ট করা চলবে না।"

হাউজ কাজি ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতার দিকে এগোলেও এদিন সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লি পুলিশের প্রধানকে দিল্লির নর্থ ব্লকে মন্ত্রণালয়ের সদর দফতরে তলব করেন।

এর পর থেকেই এলাকায় নতুন করে নানা জল্পনা ও উত্তেজনা ছড়াতে থাকে।

দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্রিফ করে আসার পর দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পটনায়ক অবশ্য জানান, "পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।"

"আমরা এর মধ্যেই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাকিদেরও আটক করার চেষ্টা চলছে", সংবাদমাধ্যমকে বলেন তিনি।

তবে দিল্লির ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র চাঁদনি চকে বুধবারও সব দোকানপাট খোলেনি।

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার রেশ সেখানে যে এখনও পরিস্থিতি থমথমে করে রেখেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।